নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সোনাইছড়িতে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি, ত্যাগ, সেবা, সহঅবস্থান, পারস্পরিক সহনশীলতা ও দ্বন্ধ নিরসনসহ শ্রদ্ধাবোধের ওপর আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা (গ্রাউস) ও অন্যন কল্যান সংস্থা (এ.কে.এস) এর উদ্যোগে আজ ২৪ নভেম্বার মঙ্গলবার সকালে সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে সংলাপ অনুষ্ঠানে একেএস প্রকল্পের মাঠ কর্মী হিরু চক্ এর সঞ্চালনায় এবং সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এ্যানিং মার্মার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সোনাইছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জহির উদ্দীন।
অনুষ্ঠিত সংলাপে ইসলাম ধর্মের আলোকে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কুমিরাপাড়া এমদাদিয়া মাদরাসার প্রধান পরিচালক মাওলানা আলী আহাম্মদ কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিশদ আলোচনা পেশ করেন। তিনি বলেন, সমগ্র কোরআন এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীজুড়ে মানবসেবার যেসব উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়, তা বলে শেষ করার মতো নয়।
তিনি সুরা বাকারার ১৭৭ নম্বর আয়াত, সুরা দাহরের ৮ নম্বর আয়াত, সুরা নিসা, সুরা আসর, সুরা আয্ যারিয়াত এবং সহি বোখারি, মুসলিমসহ ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স উত্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘মানবসেবার জন্য বিত্তবান হতে হয় না; প্রয়োজন বিশুদ্ধ মানসিকতা এবং মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা।’ তা ছাড়া ধনীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ধনীর সম্পদের মধ্যে দারিদ্র্যের অধিকার রয়েছে; এ অধিকার আদায় করা না হলে দুনিয়া ও আখিরাতে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
সোনাইছড়ির কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের ভান্তে প্রজ্ঞা প্রোনন বৌদ্ধ ধর্মের ওপর বিস্তার আলোচনায় তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্ম একটি শান্তির ধর্ম। গৌতম বুদ্ধ ভোগবাসনা চরিতার্থকরণ এবং তার অঞ্চলে প্রচলিত শ্রমণ আন্দোলনের আদর্শ অনুসারে কঠোর তপস্যার মধ্যে মধ্যপন্থা শিক্ষা দিয়েছিলেন। তৎকালে বুদ্ধের যে কথাগুলো সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করেছিল, তা হচ্ছে মেত্তা, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা।
মেত্তা বা মৈত্রী শব্দটির অর্থ হচ্ছে সবাইকে সমভাবে ভালোবাসা, যে ভালোবাসা মা তার একমাত্র সন্তানকে দিতে পারে। শিষ্য সংঘের প্রতি বুদ্ধের নির্দেশ ছিল মেত্তা বা মৈত্রী যেন মানুষের মনে কখনো ক্ষণস্থায়ী আবেগে পরিণত না হয়। এটা হবে মানুষের প্রতি মানুষের মনের স্থায়ী আবেদন।
এই মন সর্বক্ষণ অনুরণিত হবে মানুষের সেবা ও শুভ চিন্তায়। এর প্রকাশ প্রতিফলিত হবে মানুষের সব কথায় এবং কাজে। এ অবস্থায় মানুষের মন যখন রঞ্জিত হয়, তখন সমাজের মঙ্গল না হয়ে পারে না।
অনুষ্টিত অন্তসংলাপে বিশেষ অতিথি অতিথি হিসেবে ছিলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো,ইমরান,নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি শামীম ইকবাল চৌধুরী, রেজু হেডম্যান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আহাম্মদ, জারুলিয়াছড়ি মৌজার হেডম্যান মইও অং মার্মা, সোনাইছড়ি মসজিদ ইমাম মাওলানা আবু সুফিয়ান, ক্রেথোয়াই প্রু মেম্বার মিলন, সমাজসেবক সিরাজুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম, ক্যজ মেম্বার, ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং সহ-সভাপতি বশির আহাং, ইউপি মহিলা সদস্যা মাছিং নু মার্মা প্রমূখ।