বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে অ্যাম্ফিটামিনযুক্ত ইয়াবা টেবলেট যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখোমুখি করেছে। যাহা প্রকারান্তরে জাতীয় বিপর্যয় হিসাবে দেখা দিচ্ছে।
গত ১ আগস্ট ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬০০ পিচ ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় রায়ের পর্যবেক্ষণে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল উপরোক্ত মতামত প্রদান করেন।
যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৩১/২০১৮ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ১২০/২০১৮ ইংরেজি এবং এসটি মামলা নম্বর ১২১৪/২০১৯ ইংরেজি।
এ মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আবদুর রউফ-কে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। রায়ে একইসাথে ৩ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৯(খ) ধারায় আসামীকে দোষী সাব্যস্থ করে এ রায় প্রদান করা হয়। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বার, অর্থাৎ জনপ্রতিনিধি বিবেচনায় আসামীকে অপরাধের নিম্মতম সাজা প্রদান করা হয়েছে বলে রায় প্রচারের সময় বিজ্ঞ বিচারক ঘোষনা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামী আবদুর রউফ মেম্বার আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
এই মাদক মামলার রায়ে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল’র প্রদত্ত পর্যবেক্ষণ নিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন :
রাষ্ট্র পক্ষে এই মাদক মামলা পরিচালনাকারী কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। একই নীতিতে বিচার বিভাগ আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে দেশের শত্রু মাদককারবারীদের জন্য সুস্পষ্ট একটা ‘ম্যাসেজ’ রয়েছে। কক্সবাজার বিচার বিভাগে প্রচুর মামলার জট থাকলেও মাদকের মামলা গুলো আদালত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছে বলে জানান-পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
তিনি আরো বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্র পক্ষ ন্যূনতম সময়ের মধ্যে সকল সাক্ষী, আলামত, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল ও অন্যান্য এ্যাভিডেন্স যথাযথভাবে উপস্থাপন করেছে। রাষ্ট্র পক্ষ আদালতে মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটির যথার্থ রায় প্রদান ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেন, এ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞ বিচারকের দেশপ্রেম ও দূরদর্শিতা ফুটে উঠেছে এবং রাষ্ট্রের নীতির আইনানুগ প্রতিফলন ঘটেছে। রায়ে বিজ্ঞ বিচারক তাঁর পেশাদারিত্ব এবং দায়িত্বশীলতার অসাধারণ নজীর রেখেছেন। এ পর্যবেক্ষণ সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ মন্তব্য করেন।
‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ নামক সংগঠনের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, মাদক পাচার প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো বেশী কঠোর ও সচেতন হতে হবে। নাহয় কক্সবাজারে মাদক, খুন, অস্ত্র, মানিলন্ডারিং, মানবপাচার সহ অন্যান্য জগন্য অপরাধ আরো বৃদ্ধি পাবে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাঁর মতে, গত ১ আগস্ট কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ঘোষিত মাদক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে একটা বার্তা যাবে।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু বলেন, কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে মাদকপাচার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় নাগরিকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে। স্থানীয় সামাজিক পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। তাঁর মতে, মাদকপাচার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কক্সবাজার অঞ্চলে বিভিন্ন অপরাধকর্ম অনেক কমে আসবে। গত ১ আগস্ট কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হওয়া মাদক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে মাদককারবারীরা কিছুটা হলেও আতংকিত হবে বলেও মন্তব্য করেন অ্যাডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বলেন, মাদককারবারীদের হারানোর কোন ভয় নেই। এজন্য তারা সহজে অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাঁর মতে, মাদককারবারীরা শুধু কক্সবাজারের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য ক্ষতিকর। গত ১ আগস্ট কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রায় প্রদান করা মাদক মামলায় বিজ্ঞ বিচারকের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বলেন, মাদককারবারীদের সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি কঠোর আইনি পদক্ষেপগুলো সমাজে নিঃসন্দেহে সুফল বয়ে আনবে।