কক্সবাজার বিমান বন্দরে চালু হচ্ছে দিবা-রাত্রির ফ্লাইট

কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দর থেকে রাত্রি কালিন বিমান চলাচলের মাধ্যমে বিশ্বের সাথে কক্সবাজারের সেতু বন্ধন সুদৃঢ় হবে, এমনটাই প্রত্যাশীত ছিল সবার। কক্সবাজারে অবকাঠামোর সংকটে এখন বিকাল ৫টা পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারে। তবে সংকট আর থাকছে না মার্চ থেকে। আগামী মার্চ মাসে সাগরঘেঁষা কক্সবাজার বিমানবন্দরে চালু হচ্ছে দিবা-রাত্রির ফ্লাইট।

এতে করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কক্সবাজার বিমান বন্দরটি পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য মাইলফলক হবে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ঝিনুকের আদলে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ৬৭ শতাংশ। আর সমুদ্রের জল ছুঁয়ে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ের নির্মাণের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আন্তরিকতার ফলে কক্সবাজার বিমান বন্দরটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ পরিচয় বহন করতে যাচ্ছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার নাজিরারটেক মোহনা। গেল কয়েকমাস আগেও সমুদ্রের এই মোহনায় জোয়ার-ভাটা হত। কিন্তু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এই মোহনায়। যেখানে সমুদ্র ছুঁয়ে তৈরি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের নয় হাজার ফুটের দীর্ঘ রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকছে সমুদ্রের মধ্যে।

ইতোমধ্যে চারদিকে শেষ হয়েছে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ, শেষ হয়েছে বালি ভরাটও। এখন চলছে মাটি লেভেল ও ব্লক আনার কাজ। নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগে বর্ধিত এই নতুন রানওয়ের কাজ শেষ হবে বলে জানালেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে বর্ধিতকরণ প্রকল্পের সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার এম মোশাররফ হোসাইন জানান, প্রধানমন্ত্রী গেল বছরের আগস্ট মাসে সমুদ্রের জল ছুঁয়ে নতুন রানওয়ে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সমুদ্রের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুট নতুন রানওয়ের নির্মাণ কাজ। গত ৫ মাসে এই প্রকল্পের ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগেই এই নতুন রানওয়ের কাজ সম্পন্ন হবে। ১৪ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিকমানের উন্নয়নের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দল।

তারা নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। এরপর নতুন রানওয়ে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চীনা কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দীর্ঘ বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলটি সরজমিনে ১ হাজার ৩০০ ফুট সমুদ্র গর্ভে নির্মিত রানওয়ের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন।

পরে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসেব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বলেন, হিমালয় পর্বত জয়ের মতো একটি অভিযান এই যে নতুন রানওয়ে যেটা সাগর গর্ভে প্রবেশ করছে; এর চেয়ে বড় সফলতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এই কালে পার্থক্য করলে এটা একটা বিরাট বিষয়। বঙ্গোপসাগরের ভেতরে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম একটি রানওয়ে হচ্ছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই আমাদের নানা দিক-নির্দেশনা প্রদান করছেন প্রধানমন্ত্রী। রানওয়ে বর্ধিতকরণের যে কাজ সমুদ্র গর্ভে ১ হাজার ৭০০ ফুট বাড়িয়ে রানওয়ে করা হচ্ছে, এতে পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে যে কোন বিমান কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, কক্সবাজারে এভিয়েশনের হাব হবে। তারই একটা সফল বাস্তবায়ন পক্ষে সিভিল এভিয়েশন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসেব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, কমিটির সদস্য সদস্যরা, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয়রা একযোগে সহযোগিতা করছে।

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১’ কক্সবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড গিয়াস উদ্দিন বলেন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন সময়ে কক্সবাজার বিমান বন্দরটি বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুনরায় এই বিমান বন্দরটি চালু করা হয়। এরমধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৫০ বৎসর পর শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এটা জাতির জনকের অসমাপ্ত স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বের সাথে সরাসরি যোগাযোগের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। এটা গর্ব ও গৌরবের।

এ সময় কমিটির অন্যান্য সদস্য, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

%d bloggers like this: