কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মসৃজন কর্মসূচির নামে ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজু পকেট ভারী করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কয়েকটি অডিও এবং সরেজমিনে ইউনিয়নের শাহ পরীর দ্বীপ ৮ নং ওয়ার্ডের উত্তর পাড়া,কোনার পাড়া, ডেইল পাড়া ও ডাঙ্গার পাড়া ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে টেকনাফ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি(ইজিপিপি) প্রকল্পে ৫৪৮৯ জন শ্রমিকের বিপরীতে ৭৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। তার ওয়ার্ডে (৮নং) বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট করার জন্য রেজু মেম্বার তার অনুসারীদের শ্রমিক বানিয়ে অন্তত লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর ।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অতিউৎসাহী হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রেজু তার অনুসারীদের দিয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক শ্রমিকদের তালিকা করান। পরে তা ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। এতে গোটা উপজেলায় ৫৪৮৯ জন শ্রমিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকায় শ্রমিকের নাম থাকলেও তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানেনা এমন অভিযোগও রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, কর্মসৃজন প্রকল্পের নামে লক্ষ টাকা বাণিজ্য করেছে ইউপি সদস্য রেজু। একাধিক শ্রমিক ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে প্রকল্পেই কয়েকজন শ্রমিক কাজ করলেও এক তৃতীয়াংশ শ্রমিককে পাওয়া যায়নি। ভেকু মেশিনেই মাটি কাটতে ও দেখা গেছে। তাতেও নয়ছয় করে যেন সরকারি টাকা লুটপাটের এক মহা উৎসব চলছে। শ্রমিক নেই, কিন্ত ব্যাংক হিসাবে শ্রমিকের নাম ব্যবহার হচ্ছে ঠিকই। শ্রমিকের নামে একাউন্টে টাকা আসলেও প্রাপ্ত টাকার এক তৃতীয়াংশ দিতে হচ্ছে রেজু মেম্বারকে এমনটি অভিযোগ শ্রমিকদের। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া ও পরিবর্তীতে সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন বলে জানান একাধিক শ্রমিক।
এই বিষয়ে ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, এই প্রকল্পে নয়ছয় করার কোন সুযোগ নেই। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তারা এমন অভিযোগ করছেন। ভাইরাল হওয়া অডিও সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি সুপার এডিট। আমার সাথে অন্য একটি বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছিল। যার সাথে এই প্রকল্পের কোন সম্পর্ক নাই।
ভুক্তভোগী জুবাইর, দিলু আক্তার,জহির আহমেদ, আবু সায়ীদ,হাফেজ উল্লাহ,কবির আহমেদ ও তারেক বলেন, নয় ছয় করে শ্রমিকের টাকা মারার অপর নাম এই প্রকল্প। সরকার যে উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে রেজু মেম্বারের মত কিছু জনপ্রতিনিধিদের কারনে এর সুফল পায়না গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। এই বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত দরখাস্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে এই প্রতিবেদকে জানিয়েছে।
মূলত, কর্মহীন সময়ে স্বল্পমেয়াদী কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কর্মক্ষম দুস্থ পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি(ইজিপিপি) সরকারের একটি গৃহীত প্রকল্প। এই প্রকল্প থেকে যদি গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী সুফল না পায় তাহলে এটি সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সমান এমনটি মনে করছেন সচেতন সমাজ।