টেকনাফ উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

টেকনাফ উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ১৯ অক্টোবর সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন ক্ষক্কে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ এরফানুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বদি।

এ সময় বর্তমান পরিস্থিতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংসতার ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় টেকনাফ উপজেলাকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং,মাদক মুক্ত করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,কক্সবাজার জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত সদস্য আলহাজ্ব জাফর আহমদ, উপেজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান তাহেরা আকতার মিলি,উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ টিটু চন্দ্র শীল, উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাকিরুল ইসলাম, মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল বশর, সাধারন সম্পাদক মাহাবুব মোর্শেদ, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলম বাহাদুর, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সোনা আলী বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন,সদর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ,উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য আবুল কালাম। সভায় আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যগণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন,রোহিঙ্গারা টেকনাফের ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন অবস্থান করছে। কি উদ্দেশ্যে তারা ভাড়া বাসায় থেকে অবস্থান করছে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। মায়ানমারের ভিতরের এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনা গেলে সেটা বাংলাদেশের সীমানায় নয়।

প্রধান অতিথি সাবেক সাংসদ ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বদি বলেন, আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক যাতে ভাল থাকে সেজন্য সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে। মাদকে পরিপূর্ণ টেকনাফকে কলঙ্কমুক্ত করতে হলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। হাতে নাতে মাদক আটক করার পর যাদেরকে আসামী করা হয় তাদেরকে ৫ বা ১০ লাখ টাকা নিয়ে চার্জসিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। এদেরকে বাদ দেওয়ার জন্য যারা সুপারিশ করে তারাই হল মূল গডফাদার। সেই গডফাদারকে চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দেন সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বদি।

তিনি আরো জানান, এক্সক্লুসিভ জোনে একটি জেটি ঘাট হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই জেটিঘাট নির্মাণ হয়ে গেলে সেখান থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করা হলে ৪০ মিনিটে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পৌঁছাতে পারবে পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ এরফানুল হক চৌধুরী জানান, মাদক নির্মূলে সকল আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে ইতোপূর্বে আরও ২/৩ টি সভা করেছি। মাছ ধরার সকল নৌকা মালিক, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকগণদের নিয়েও সভা করেছি। রোহিঙ্গারা এদেশে সকল অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে গ্রামে আসতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সীমান্ত উত্তেজনায় আমরা উদ্বিগ্ন। বাসা বাড়িতে কোন রোহিঙ্গা থাকতে না পারে এবং রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পে চলে যাই সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, টেকনাফে আসার পর হতে আইন- সিদ্ধান্ত শৃংখলা পরিস্থিতি ভাল আছে।
এলাকায় আইন-শৃংখলার অবনতি বা কোথাও কোন প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা দিলে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাৎক্ষনিকভাবে ফোনে জানানোর জন্য অনুরোধ জানান।

টেকনাফ এর বন বিভাগ প্রতিনিধি জানান,০৫ একর পান বরজ অবৈধ অবৈধ দখলদার হতে উদ্ধার করা হয়েছে। পাথর চোরাকারবারীরা বনের পাহাড় বিরুদ্ধে থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর জানান, প্রায় ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা টেকনাফ উখিয়ায় রয়েছে। তাদের কারণে দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে ও জনসাধারণকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় শুধু প্রশাসনকে দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে হবেনা। এলাকায় গিয়ে কমিটি গঠন করে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করে এ মাদক প্রতিরোধ করা সম্ভব। পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে বসবাস করে অধিকাংশ রোহিঙ্গা। সেখান থেকে আবার ক্যাম্পে গিয়েও রেশন সুবিধাও ভোগ করে। তিনি আরও বলেন, পৌরসভা ও ইউনিয়নকে রোহিঙ্গা বসবাসকারী লোকদের৷ চিহ্নিতকরত তালিকা তৈরি করে আগামী আইন শৃংখলা মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হওক। এছাড়াও এলাকার মানুষ অবৈধ অস্ত্রের কাছ জিম্মি হয়ে পড়েছে। যার কারণ তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এসব অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য আমি আইন শৃংখলা কমিটির সহযোগিতা কামনা করছি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে ফেলা উচিত বলে আমি মনে করি। অবৈধভাবে পাহাড়ের পাথর নিয়ে একজন বড় টিকাদার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে উত্থাপন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট থেকে স্পীড বোট ও ট্রলারে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হলে ৪০ মিনিটে প্রবাল দ্বীপে যাওয়া সম্ভব বলে তিনি জানান।

জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত সদস্য জাফর আহমদ বলেন, গত ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আমি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, মাননীয় সাংসদ, টেকনাফের ইউএনওসহ আইন শৃংখলা বাহীনির সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি যেকোনো জায়গায় বসত ঘরে আগুন ধরলে সেখানে গিয়ে নিরলসভাবে কাজ করার জন্য তিনি ফায়ার সার্ভিসকে অনুরোধ জানান।

Leave a Reply