ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাচ্ছে সদর হাসপাতালের সাথে আইসিআরসি’র চুক্তির সময়সীমা

# জরুরী বিভাগে চিকিৎসা ব‍্যাহত হওয়ার আশংকা

এমনিতেই লোকবল সংকট। যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় চাহিদা অনুযায়ী জনবল নেই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে এই অবস্থা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদ শূন্য। সেখানে আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে জরুরি বিভাগের সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্যা রেডক্রস (আইসিআরসি) এর প্রকল্পের তিন বছরের চুক্তির সময়সীমা। ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ যেখানে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন ৪৮ জন। তাদের সম্পূর্ণ খরচাদি আইসিআরসির অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, জীবন রক্ষাকারী দামী ঔষুধ এক্স-রে, ইসিজি, ম্যালেরিয়ার টিকা, ডেঙ্গু টিকার সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। চুক্তি শেষ হয়ে গেলে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মমিনুর রহমান দৈনিক কক্সবাজার’কে বলেন, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা আইসিআরসি’র সাথে জরুরি বিভাগের তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। যেখানে ৪৮ জন বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর চুক্তির সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এমতাবস্থায় নতুন লোকবল নিয়োগ ও যাবতীয় খরচ যোগাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হবে।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা আইসিআরসি’র সাথে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সাথে জরুরি বিভাগের তিন বছরের জন্য চুক্তি হয়। যেখানে ৪৮ জানের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সবকিছু সংস্থাটির পক্ষ থেকে বহন করা হয়েছে। রোগীদের এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, সিবিসি, ম্যালেরিয়া টিকা, ডেঙ্গু’র টিকাও সংস্থাটির খরচে দেওয়া হতো। এছাড়া, জীবন রক্ষাকারী দামী ঔষুধ, ইনজেকশন আইসিআরসি’র পক্ষ থেকে দেওয়া হতো। একারণে একজন রোগী টিকেট কেটে জরুরি বিভাগে প্রবেশ করা মাত্রই চিকিৎসা-সেবা পেয়েছে। রোগীর পরীক্ষা- নিরীক্ষা সকল প্রকার খরচাদি ও-ই সংস্থা বহন করার কারণে ইমারজেন্সি রোগীও সুস্থ হয়ে উঠেছে। সিটি স্কেন, ইউএসজি ২৪ ঘন্টা সার্ভিস চালু ছিল। পাশাপাশি প্যাথলজী, ল্যাবরেটরি সাপোর্ট, ২৫ বেডের সিসিইউ, ডোব টেস্ট এবং নতুন সংযোজন ওপিডি সেবা সার্বক্ষনিক পেয়েছেন রোগীরা।

২০২১ সালে রোগীর এক্স-রে করা হয়েছে ২,৬০০৩ জন। আল্ট্রাসনোগ্রাফী করা হয়েছে ১০,৮০৭ জনের। সিএসকেন ৪২১ জন, ইসিজি ৭,০৫১ জন। ২০২২ সালের হিসেবে দেখা যায়, এক্স-রে ২,৮০৫৩ জন, আল্ট্রাসনোগ্রাফী ১১৭২২ জন, সিটিএসকেন ১০৪২ জন, ইসিজি ৬৭৪৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে শুধু ইমারজেন্সি’তে ১ লাখ ৬ হাজার ২০৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যেখান থেকে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ১ কোটি ১২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯২৪ টাকা। ২০২২ সালে রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৬ জন৷ যেখান থেকে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ২ কোটি ১৪ লক্ষ ৩ হাজার ৫৪৮ টাকা।
তারমধ্যে গুরুতর অনেক রোগীর চিকিৎসাও সদর হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে। অনেক গুরুতর রোগী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে হয়নি। যার চিকিৎসা হয়েছে সদর হাসপাতালে। যার কারনে দেশের ১ নাম্বারে স্থান পেয়েছেন সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ।
জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, আইসিআরসি’র থেকে যে সাপোর্ট পাওয়া গিয়েছে তাতেই ইমারজেন্সি রোগী’র চিকিৎসাতেও বেগ পেতে হয়নি। তাদের দামী ইনজেকশন, ঔষধ সার্বক্ষনিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে এনজিও সংস্থা আইওএম’র সাথে নতুন করে জরুরি বিভাগের চুক্তি হচ্ছে বলে জানা যায়।
জরুরি বিভাগের প্রধান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আশিকুর রহমান দৈনিক কক্সবাজার’কে জানান, সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেবা দেশজুড়ে প্রশংসনীয় হয়েছে। রোগী টিকেট নিয়ে একটুও বসে থাকতে হয়না। এজন্য দেশের সকল জরুরি বিভাগের চেয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা এগিয়ে আছে। এ-র আরেকটি কারণ আছে। আইসিআরসি’র সার্বিক সহযোগিতা ও চিকিৎসকদের আন্তরিকতার কারণে এ সম্মান অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু এ-ই ডিসেম্বরের তিন বছরের প্রকল্পের চুক্তির সময়সীমা শেষ হচ্ছে। তারা যাবতীয় সবকিছু দিয়ে সহযোগিতা করেছিল বলেই রোগীরা এতো দ্রুত চিকিৎসাসেবা পেয়েছে। জীবনরক্ষকারী ঔষুধও ছিল যা অনেক দামি। যা সাধারণ রোগীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ছিল। রোগীদের কোন ধরনের ঔষুধ কিনতে হয়নি। এজন্য দ্রুত সেবা পেয়েছেন রোগীরা। তিনি বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা কম। যে কয়জন আছে তাদের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়।
সদর হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে ১০ জনের ৬টি পদেই শূন্য, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১১ পদের আছে ১০ জন চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার ৪৫ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩৯ জন, নার্স ৫৪৭ জনের মধ্যে ১১৬ জনের পদ শূন্য, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ৫৭ জনের মধ্যে পদ শূন্য ৩৬ এবং চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ২৪ জনের মধ্যে ৯ টি পদ খালী।
তত্বাবধায়ক বলেন, লোকবল সংকটের কারনে কর্মরত চিকিৎসকের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বিষয়টি বার বার মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক সাক্ষরিত একটি চিঠি মন্ত্রণালয় বরাবরের পাঠানো হয়। চিঠিতে লোকবল সংকট ও আইসিআরসি’র সাথে চুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট বলা হয়।
এদিকে জরুরি বিভাগের কর্মরতদের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, হঠাৎ চাকরি চলে গেলে পরিবারের খরচ যোগাতে কষ্ট হয়ে পড়বে।

Leave a Reply

%d bloggers like this: