নাফ নদী দখল করে মাছ চাষ, জানে না পাউবো

কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদী দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। নাফ নদীর প্যারাবন কেটে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল হুদা।

সরেজমিনে দেখা যায়, হ্নীলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মোছনী খাল থেকে লেদা খাল পর্যন্ত নাফ নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের সুবিধার জন্য পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই বাঁধের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে মাছ চাষের খাবারসহ বিভিন্ন মালামাল রাখার খুপড়ি ঘর। সেখানে যাওয়ার পর মাছের ঘের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কয়েকজন এগিয়ে এলে কথা হয় তাদের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করে তারা জানান, এখানে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়।

নদীপাড়ের বাসিন্দা বৃদ্ধ সনীল বড়ুয়া বলেন, নাফ নদী দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। যে বড় নৌকা এখন চলাচল করতে পারছে, সামনে হয়তো নদী দখলের কারণে চলাচল করতে পারবে না। চিংড়ি ঘেরের নামে এই নদীটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় জেলে রফিক মাঝি বলেন, বছরের শুরুতে সীমান্ত সড়কের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মাটি কাটে। পরে এটি চিংড়ির ঘেরে পরিণত হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হুদা টাকা দিয়ে এটি দখল করে নেন। আমরা এখন এই চিংড়ি ঘের দিয়ে চলাফেরা করতে পারি না। কয়েক দিন আগে আমার এক ছোট ভাই ভুলে খাল মনে করে এই চিংড়ি ঘেরে জাল ফেললে তাকে বেধড়ক মারধর করেন ইউপি সদস্য নুরুল হুদা।

স্থানীয় বাসিন্দা শফিক বলেন, কিছু দিন আগে নদীটি খনন করা হয়েছে। কিন্তু এতে আমাদের কী লাভ হলো? ইউপি সদস্য ও তার লোকজন নদীটি দখল করে রাখলেও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার উপকূলে বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের অন্যতম কারণ হচ্ছে প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়ি ঘের তৈরি এবং নদী ও সাগরের তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন। তার মাঝে যদি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে কোনো চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে চিংড়ি ঘের তৈরি করে, তাহলে বলতে হয় মাদক ব্যবসায়ীদের ক্ষমতার কাছে প্রশাসনের সব দপ্তর নতজানু হয়ে গেছে। অবিলম্বে নাফ নদীর পাড়ের সকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে নদী দখলমুক্ত রাখা হোক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য নুরুল হুদা বলেন, সীমান্ত সড়কের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড মাটি কেটে নেওয়ার পর এটি আমাকে দেখভাল করার জন্য দেয়। তাই আমি ঘেরটা দেখাশোনা করছি। সেখানে আমি চিংড়ি চাষ করছি। যদি সরকার না চায় তাহলে ছেড়ে দিব।

নদীতে বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এই বাঁধ আমি দেইনি। নদীর সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করার সময় এটি দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু দেখাশোনা করছি।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, নাফ নদীর পাশে একজন চিংড়ির ঘের করেছে শুনেছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, নদী দখল করে মাছ চাষের বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে গিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, নদী দখল করে চিংড়ি ঘের করার বিষয়টি আজকে আপনার কাছেই শুনলাম। কেউ যদি এই রকম কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমি দেখছি।

Leave a Reply

%d bloggers like this: