পূজা মন্ডপগুলোতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে : ডিএমপি কমিশনার

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব আসন্ন দুর্গা পূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে রাজধানীর পূজা মন্ডপগুলোতে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম । দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে ডিএমপির সকল পুলিশ ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের পূজামন্ডপে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে সেই জন্য পুলিশ সদস্যদের পূজার সময়ে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
কমিশনার আজ বুধবার ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে আগস্টের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
কমিশনার বলেন, এ বছর পূজা মন্ডপে আনসার সদস্য স্থায়ীভাবে নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি পুলিশও পূজার সময়ে মন্ডপে অবস্থান করে দায়িত্ব পালন করবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করলে পুলিশ বাধা দিবে না। তবে রাজনীতির নামে যারা আগুন সন্ত্রাস করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সংঘাত বাড়ানোর জন্য কিছু মানুষ কাজ কওে; তাদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। এসব মিছিল মিটিংয়ে যাতে কোন ধরনের প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেন তিনি।
গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, মামলা তদন্ত, চোরাই গাড়ি উদ্ধার, মাদক উদ্ধার ও মূলতবি মামলা নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব সহকারে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার। এছাড়াও ইভটিজিং প্রতিরোধ ও মাদক ব্যবসায়িদের গ্রেফতারে আরও কাজ করারও তাগাদা দেন তিনি।
মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভার শুরুতেই গত আগস্ট মাসের অপরাধ চিত্র বা অপরাধ বিবরণী পর্যালোচনা করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন কমিশনার।
সভায় ঢাকা মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানসহ ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসারদের পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার।
আগস্ট মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৮টি ক্রাইম বিভাগের মধ্যে যৌথভাবে প্রথম হয়েছে তেজগাঁও বিভাগ ও মিরপুর বিভাগ। তবে ওয়ারেন্ট তামিল করে শ্রেষ্ঠ হয়েছে উত্তরা বিভাগ। শ্রেষ্ঠ থানা হয়েছে মোহাম্মদপুর থানা। সহকারি পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার মুজিব আহম্মেদ পাটওয়ারী। পুলিশ পরিদর্শক তদন্তদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন মুগদা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল হোসাইন। পুলিশ পরিদর্শকদের (অপারেশনস্) মধ্যে প্রথম হয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস্) মো. তোফাজ্জল হোসেন।
শ্রেষ্ঠ এসআই নির্বাচিত হয়েছেন যৌথভাবে চকবাজার মডেল থানার এসআই নুর উদ্দিন-১ ও পল্লবী থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলাম। বিস্ফোরক উদ্ধারে প্রথম হয়েছেন চকবাজার মডেল থানার এসআই নুর উদ্দিন-১। মাদক উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন পল্টন থানার এসআই সুজন কুমার তালুকদার এবং চোরাই গাড়ি উদ্ধারে প্রথম হয়েছেন লালবাগ থানার থানার এসআই জ্যোতিময় মল্লিক।
৯টি গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের সহকারি পুলিশ কমিশনার দেবাশীষ কর্মকার। অস্ত্র উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার হয়েছেন গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহিদুর রহমান। মাদদ্র্র্রব্য উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের উত্তরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুুলিশ কমিশনার বদরুজ্জামান জিন্টু। চোরাই গাড়ি উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার হয়েছেন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারি পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। অজ্ঞান/মলম পার্টি উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার হলেন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু আশরাফ সিদ্দিকী।
৮টি ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে ট্রাফিক লালবাগ বিভাগ। শ্রেষ্ঠ সহকারি পুলিশ কমিশনার হয়েছেন ট্রাফিক লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী ট্রাফিক জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হয়েছেন ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগের সবুজবাগ ট্রাফিক জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. শফিকুল ইসলাম। শ্রেষ্ঠ সার্জেন্ট হয়েছেন ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মো. আব্দুল কাদের।
এছাড়াও ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পিআর বিভাগসহ ১০ টি বিভাগ ও বিভিন্ন পদ মর্যাদার ১২০ জন অফিসার এবং ফোর্সকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদারের সঞ্চালনায় সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply