যে কারণে নির্ঘুম রাত পার করতে হচ্ছে রামুর ১০ গ্রামের মানুষের

কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ ভুগছেন ডাকাত আতঙ্কে। প্রতিনিয়ত শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছেন এসব এলাকার নারী-পুরুষ।

অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, নিরীহ কৃষককে ধরে নিয়ে গিয়ে টাকার জন্য অমানুষিক নির্যাতন করে আসছে জোয়ারিয়ানালার গহীন পাহাড়ে অবস্থানরত কয়েকটি সক্রিয় ডাকাত গ্রুপ। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলে আসলেও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

ডাকাত দল কর্তৃক অপহরণ আতঙ্কে নির্ঘুমে জোয়ারিয়ানালার ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। পালাক্রমে পাহারায় রাত কাটাচ্ছেন এলাকার মানুষ।

সরেজমিন পরিদর্শন ও জোয়ারিয়ানালা এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রোববার (৯ অক্টোবর) সকালে জোয়ারিয়ানালা এলাকার পূর্বমোরাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল আজিজ মহিষ চড়ানোর উদ্দেশ্যে পাহাড়ি এলাকা এজাহার বলির ঘোনায় গেলে ডাকাত দল তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নির্যাতন চালায়। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর এলাকাবাসীর তৎপরতায় ডাকাতদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পায় রাখাল আবদুল আজিজ।

জোয়ায়ারিয়ানালার ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা কৃষক মোস্তাক জানান, তাদের এলাকার একজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সশস্ত্র ডাকাত দলের সদস্যরা। বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে জোয়ারিয়ানালার কৃতীসন্তান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসাইনকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি এলাকার লোকজন সহকারে পাহাড়ের ভিতর থেকে রাখাল আজিজকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।

অপহরণের শিকার ভুক্তভোগী আবদুল আজিজ জানান, সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত দল তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাহাড়ের গহীনে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে হাত-পা বেঁধে ৩ ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। ঠিক সময়ে এলাকার মানুষ গিয়ে যদি তাকে উদ্ধার না করত তাহলে হয়তো তার বেঁচে ফেরা হতো না।

পূর্বমোরাপাড়া (৫নং ওয়ার্ডের) বাসিন্দা রফিক বলেন, জোয়ারিয়ানালা এলাকায় অপহরণ সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড দিনদিন বেড়ে চলছে বলে জানান।

পূর্বমোরাপাড়ার (৫নং ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য মিজান উল্লাহ সিকদার জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ডাকাত দল আবারো সক্রিয় হয়েছে। কিছুদিন আগেও পিএমখালী এলাকার আক্তার উদ্দিন (৩৯) নামে এক ব্যক্তি অপহরণের শিকার হন, পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরেছে বলে তিনি স্থানীয় সূত্রে জানতে পারেন। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার কৃষিসহ বিভিন্ন চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়বে।

জোয়ারিয়ানালা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন প্রিন্স বলেন, তার ইউনিয়নের গত রোববার আবদুল আজিজ নামে একজন রাখালকে একদল ডাকাত অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি প্রশাসন একটু আন্তরিক হয়ে তৎপরতা চালায় তবে সব অপরাধীরা ধরা পড়বে বলে জানান।

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসাইন জানান, তার এলাকার আবদুল আজিজ নামে এক রাখালকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ডাকাত দলের সদস্যরা। খবর পেয়ে তিনি এলাকার মানুষজন সঙ্গে নিয়ে গভীর পাহাড়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। এই এলাকায় ২ হাজারের বেশি পরিবারের প্রায় ২০ হাজারের উপরে মানুষ আছেন। তাদের অধিকাংশই ডাকাতি ও অপহরণ আতঙ্কে ভুগছেন। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ ব্যাপারে রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ বড়ুয়া জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ডাকাত দল কর্তৃক অপহরণের ঘটনায় আবদুল আজিজ নামে ছেলেটি পাহাড়ি দুষ্কৃতকারীদের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে জানান।

Leave a Reply

%d bloggers like this: