সৈকতে আকাশছোঁয়া প্লাস্টিকের ‘দানব’

দূর থেকে দেখলে মনে হবে সমুদ্রের জলরাশি থেকে উঠে এসে একটি দানব বালুচর মাড়িয়ে পাশের ঝাউবাগানের দিকে ছুটছে। দানবটির তিন দিকে ঘিরে আছেন সৈকত ভ্রমণে আসা বিপুল পর্যটকসহ স্থানীয়দের অনেকে। এটি আসলে একটি ভাস্কর্য, যা তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে। উদ্দেশ্য, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সচেতন করা।

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩৫ ফুট উচ্চতার এ ভাস্কর্য ‘দানব’–এর দেখা মেলে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ রোধ ও পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নমুনা প্রদর্শনী’র অংশ হিসেবে এটি তৈরি করে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’।
আবীর কর্মকারের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এ দানব ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন। বিকেল পাঁচটায় দানব ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) বিভীষণ কান্তি দাশ, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান, সৈকত রক্ষণাবেক্ষণে গঠিত বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘আমরা অনেকে সৈকতে বোতল নিয়ে নামি। পানি খেয়ে বোতলটা বালুচরে ছুড়ে মারি। সেই বোতল চলে যাচ্ছে সমুদ্রের পানিতে। প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। সমুদ্রসৈকত দেখতে এসে যদি আমরা সমুদ্রকে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলি তাহলে দুর্গতি নেমে আসবে। সমুদ্র দেশের অতিমূল্যবান সম্পদ, সমুদ্রের ক্ষতি করার অধিকার কারও নেই।’
ভাস্কর্যের পাশে টাঙানো একটি ব্যানারে লেখা আছে, ‘এই দানব জন্মাবে না আর। প্লাস্টিক রিসাইকেল করতে হবে সবার।’ আরেকটি ব্যানারে লেখা, ‘৮৬ শতাংশ কচ্ছপ, ৪৪ শতাংশ পাখি এবং ৪৩ শতাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামুদ্রিক প্লাস্টিক আবর্জনার জন্য।’
ভাস্কর্যটি রক্ষণাবেক্ষণ দলের প্রধান ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী মো. আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভ্রমণে আসা লোকজনকে সচেতন করতেই এই দানব প্রদর্শনী। আগামী সাত দিন বালুচরে দানব ভাস্কর্য সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ প্লাস্টিক ভাস্কর্য।
সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘দানব’ ভাস্কর্য দেখার জন্য বিপুলসংখ্যক পর্যটক জড়ো হন। অনেকেই মুঠোফোনে এটির ছবি তোলেন। কেউ কেউ ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রামের রাউজান থেকে আসা ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, দানবের মুখ সমুদ্রের দিকে হলে পর্যটকেরা দূর থেকে সহজে দেখতে পেতেন। এখন দানবের পিঠ দেখা যায়।
আয়োজকেরা বলেন, গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে ট্রলারে করে কক্সবাজার সৈকতে নিয়ে আসেন। সেই বর্জ্য দিয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে। সাত দিন পর ভাস্কর্য ভেঙে প্লাস্টিক বর্জ্য সরিয়ে ফেলা হবে।
সম্প্রতি প্লাস্টিক সংগ্রহের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গলাচিপা এলাকায় খোলা হয় ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ নামের একটি দোকান। প্রতি মাসের অন্তত এক দিন এ দোকান থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে সংগ্রহ করা যাবে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্য। এ দোকানও খোলা হয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে।

Leave a Reply

%d bloggers like this: