চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রেকর্ড করতে ওসিকে আদালতের নির্দেশ

মাস্তানি কায়দায় ইটভাটা দখলে নিতে মালিককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে তিন ঘন্টা জিম্মি করে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া, ৮০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি, ইট বিক্রির ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা কেড়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীর বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী ইটভাটা মালিক ফরিদুল আলম বাদী হয়ে এসব বিষয় আদালতের দৃষ্টিতে আনলে আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করার পর এই ঘটনায় চকরিয়া থানায় দ্রুত মামলা রুজু করতে ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসাইন। সোমবার (১২ জুন) দুপুরে আদালত এই নির্দেশনা দেন চকরিয়া থানার ওসিকে।

চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এসব ঘটনায় আদালতের শরনাপন্ন হন চকরিয়ার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর লক্ষ্যারচরস্থ সিকদার পাড়ার আবদুচ ছালামের পুত্র মো. ফরিদুল আলম।

আদালতে দায়েরকৃত মামলায় চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা গ্রামের মৃত ইছহাক আহমদের ছেলে বর্তমান চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, উত্তর লক্ষ্যারচরের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান বেদার ও চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের হাটখোলা মুড়ার মৃত নূর আহমদের ছেলে নাজেম উদ্দিনকে আসামী করা হয়েছে।

অভিযোগে বাদী দাবি করেছেন- বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের রাইম্যাখোলায় বাদীসহ তিনজনের মালিকানায় ‘এসএমবি’ নামক ইটভাটা রয়েছে। অপর দুই অংশীদার বাদীর প্রাপ্ত শেয়ার জোরপূর্বক হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এক নম্বর আসামী চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীকে ভাড়া করেন। গত ২৬ মে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাদী ফরিদুল আলমকে ব্যবসায়িক আলাপ-আলোচনার কথা আছে মর্মে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান উপজেলা চেয়ারম্যান। এ সময় বাড়িতে গিয়ে দেখেন সেখানে আগে থেকে দুই শেয়ারদার হাবিবুর রহমান বেদার ও নাজেম উদ্দিন অবস্থান করছেন। সেই মুহূর্তে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজের হেফাজতে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকি দিয়ে এবং শারিরিকভাবে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে তিনটি ননজুডিসিয়াল স্টাম্পের শিরোভাগে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করে নেন চেয়ারম্যান। এ সময় পকেটে থাকা ইট বিক্রির ২ লক্ষ ৭০ হাজার নগদ টাকা কেড়ে নেন তারা। এমনকি চেয়ারম্যান বাদীর কাছ থেকে নগদ ৮০ লক্ষ টাকা চাঁদাও দাবি করেন। এই টাকা না দিলে ইটভাটার মালিকানা হারানোসহ ভাটায় রক্ষিত সব ইট নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতে থাকেন।

বাদী ফরিদুল আলম তাঁর আর্জিতে আরো দাবি করেন- উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে আসামীরা তাকে তিন ঘন্টা ধরে একটি কক্ষে বেঁধে রাখেন। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাকে ছেড়ে দেন। এই পরিস্থিতিতে ৩০ মে বিকেল পর্যন্ত ইট ভাটা থেকে ২৪ লক্ষ টাকামূল্যের তিন লক্ষ পিস ইট লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে এক নম্বর আসামী উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীকে চাঁদা হিসেবে দাবিকৃত ৮০ লক্ষ টাকা না দিলে আমার স্বাক্ষরযুক্ত নেওয়া খালি স্টাম্পে ইট ভাটা বিক্রির চুক্তিপত্র হিসেবে পূরণ করে  আমার ইট ভাটা দখল করে নিবে মর্মে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় বাদী ফরিদুল আলম আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ন্যায় বিচারের আশায়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. শাহ আলম বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজের কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে মাস্তানি কায়দায় বন্দুক ঠেকিয়ে জোরপূর্বক খালি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া, ইট বিক্রির টাকা কেড়ে নেওয়া, ৮০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি, বাড়ির একটি কক্ষে আটকে রাখার অপরাধে আদালতে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। দীর্ঘ শুনানী এবং বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসাইন চকরিয়া থানার ওসিকে দ্রুত থানায় মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ প্রদান করেন।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত আদালতের কোন আদেশ তাঁর দপ্তরে আসেনি বলে জানিয়েছেন।’

এই বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হলেও অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply