তারা ভূমিকা রাখবে পর্যটন ও পরিবারে

অপরাধে জড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে এমন ৩৬ জনকে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কর্মমূখী করেছে র‌্যাব।

প্রশিক্ষণ শেষে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাদের হাতে সনদ ও সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছেন।

এ সময় তিনি বলেন, যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তারা কেউ অপরাধী না। তবে জড়ানোর সম্ভাবনা ছিল। তাদের কক্সবাজারের দরিদ্র ও কর্মসংস্থান কম এমন সব এলাকা থেকে বাছাই করা হয়েছে।তাদের আলো দেখিয়েছে র‌্যাব। তারা এখন কাজ করে পরিবারে অবদান রাখবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মূলত যারা দীর্ঘদিন বেকার ও যাদের আশপাশে বা পরিবারে অপরাধী রয়েছে, তাদের মাধ্যমে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল, সেসব বেকার মানুষদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কর্মমূখী করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। র‌্যাব এই উদ্যোগ নিয়েছে। যা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজকে সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে মাস্টার প্রজেক্ট হিসেবে কক্সবাজারকে বেছে নিয়েছে র‌্যাব। বিভিন্ন বিষয়কে মাথায় রেখে কক্সবাজারকে এই উদ্যোগের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে অন্যান্য জেলাতেও এই কার্যক্রম শুরু হবে। যারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে। সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের সংযুক্ত করবে।

অনুষ্ঠানে র‌্যাবের মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সারাদেশে যে মামলা হয় তার ৪০ শতাংশ মাদকের মামলা। আমরা প্রতিবছর অনেক মাদক উদ্ধার করি। কিন্তু মাদক কারবারিরা তাদের পাচারের ধরণ পরিবর্তন করে, আমরাও অভিযানের ধরণ পরিবর্তন করি।

তিনি বলেন, মাদক প্রতিরোধে আমরা কিছু গঠনমূলক, সৃজনশীল ও গবেষণামূলক কাজ করেছি। যেসব জলদস্যুরা আত্মসমার্পন করেছে, তাদের আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি, যোগাযোগ রাখছি। যারা যে কাজ করতে চায়, সেই কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছি।

ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, পর্যটন এলাকার ও কক্সবাজারের পর্যটন সেক্টরের পরিবেশ উন্নয়নে আমরা ভূমিকা রাখবো।

সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছে সেতারা আক্তার মুক্তা। তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারবো। এতে আমার বেকারত্ম দূর হবে। আমরা যারাই প্রশিক্ষণ নিয়েছি তারা সবাই স্বাবলম্বী হবো।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেন, র‌্যাব আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ও নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অপরাধ প্রতিরোধের কাজ করে। র‌্যাব এটা নিয়মিত করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, জানি কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। সমাজ মানুষকে অপরাধী করে। পৃথিবীতে শূন্য অপরাধের কোন দেশ নেই। তবে আমরা শূন্য অপরাধের দেশ হতে চেষ্টা করতে পারি।

বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা এমনও দেখেছি মা তার জঙ্গী ছেলেকে র‌্যাবের হাতে তুলে দিয়েছে। আত্মসমর্পণ করা জঙ্গীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। তারাও কিন্তু ভালো হয়েছে। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের যে অর্থনৈতিক অবস্থা, তাতে সবাই উদ্যোক্তা হতে পারে। সবাই চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এই কথাটা বলেছেন, আমিও তার কথায় প্রতিধ্বনি রেখে বলতে চাই।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, তরুণ বয়সের ছেলে ও মেয়েরা বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এই অপরাধ প্রবণতা কেবল ফৌজদারি মামলা দিয়ে সমাজকে অপরাধমুক্ত করা যাবে না। যারা প্রথম পর্যায়ে অপরাধ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিৎ। সারা বিশ্বে এটাই হয়। আমাদেরও তাই করতে হবে।

তিনি বলেন, র‌্যাব জলদস্যু, বনদস্যু গ্রেফতারের পাশাপাশি অনেকে তাদের আত্মসমর্পন করেছে। র‌্যাব কেবল আত্মসমর্পণ করায়নি, তাদের খোঁজ খবর নেয় নিয়মিত। তাদের পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত খোঁজ খবর নেয়। র‌্যাবের এই পুনর্বাসনের বিষয়টিকে আরও বড় আকারে করলে দেশের মানুষ আরও উপকৃত হবে।

কক্সবাজারের মেয়র মজিবুর রহমান তার বক্তবে বলেন, কক্সবাজারে আগে টোকাই ছিল, এখন কিশোর গ্যাং হয়েছে, তারা এখন অপহরণ করে। এগুলো আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। এই শহরে চাঁদাবাজ, টোকাই, কিশোর গ্যাং এটা ভাবা যায় না।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে ইয়াবার ছড়াছড়ি, সবাইকে র‌্যাব ও পুলিশ হতে হবে। কেবল পুলিশ এটা পারবে না। কারণ একটা ইয়াবার দাম তিনশ টাকা। মাদক ব্যবসায়ীরা তাই কোন কিছু পরোয়া করে না। এদের প্রতিহত করতে হবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে গ্রোমিং হয়েছে, তাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা বেড়েছে। তারা কাজ করবে। অপরাধ প্রবণতা করবে। এমন কর্মশালার মাধ্যমে অপরাধ কমে আসবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, র‌্যাবকে অভিনন্দন তারা এই উদ্যোগে প্রথমেই কক্সবাজারকে বেছে নিয়েছে।

তিনি বলেন, এমন আয়োজনে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আরও উৎসাহ পাবে।একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

Leave a Reply