কক্সবাজারে একটি পেট্রোল পাম্পে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ এনে জরিমানার টাকা নিয়ে নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এঘটনায় ওই কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়োজিত মো: রিদুয়ান নামের এক দালালকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
যন্ত্র নিয়ে পরিমাপ করেন এবং সামান্য ক্রটি রয়েছে বলে ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেয়। পরে অফিসে যোগাযোগের জন্য বলা হয়। এরই সূত্র ধরে ওই ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তারা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানার টাকা বাবত দালাল মো: রিদোয়ানের হাতে তুলে দেন। এসময় এক লাখ বিশ টাকার বদলে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের হাতে রশিদ দেয়া হশ ২০ হাজার টাকা। অভিযানকারি কর্মকর্তা এবং তাঁর নিজস্ব দালাল ভাগ করে নিলেন ১ লাখ টাকা। এ নিয়ে জানাজানি হওয়ার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা ভূক্তভোগীর হাতে এক লাখ টাকা ফেরত দেন। এঘটনায় ভবিষ্যতে হবে না বলে জানান। পরে এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তা ইমরানের নিজস্ব দালাল হিসেবে পরিচিত মো. রিদুয়ানকে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান।
জরিমানার নামে দালালের মাধ্যমে টাকা আদায় করে আত্মাসাৎ করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
রামু নাহার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, গত (৬ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে (০৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন নেতৃত্বে ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালান। এসময় নানা অজুহাতে ১লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেন। পরে অফিসে যোগাযোগ করতে বললে তাদের কথামত একইদিন সন্ধ্যায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে আসেন। এসময় সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনকে অফিসে না পেয়ে মুঠোফোনে কল করলে সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন ১ লাখ টাকা রিদুয়ানকে এবং ২০ হাজার টাকা অফিসে জমা দিতে বলেন। তারপর রিদুয়ানকে ডেকে তার হাতে ১ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়। আর বাকি ২০ হাজার টাকা অফিসের ভেতরে গিয়ে এক কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়ে একটি রশিদ সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে অফিসের কর্মকর্তা ২০ হাজার রশিদ দেয়ায় সন্দেহ লাগে। তাই এর পরদিন বুধবার পুনরায় রিদুয়ানকে ১ লাখ টাকা দেয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে রেকর্ড করি আর সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের সঙ্গে কথা বলে তারও কল রেকর্ড করি।”
এ ঘটনার পর পর বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন এর সাথে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনভাবেই কোন রিসিভ
করেননি।
দালাল হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ রিদুয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে আসলে সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন এর সাথে ক্যাব প্রতিনিধি হিসেবে
তিনি অভিযানে যান। ওখানে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি শুনেছেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারি, কর্মকর্তার সাথে সরাসরি আলাপ করার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া
হয়েছে।
রামু নাহার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আরও বলেন, বিষয়টি বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান স্যারের কক্ষে আমি ও সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন যায়। এসময় প্রথমে মো. ইমরান হোসাইন বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা করে। কিন্তু পরবর্তীতে কল রেকর্ড শুনার পর ১ লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তার মধ্যে রিদুয়ানকে ১০ হাজার টাকা এবং মো. ইমরান হোসাইন ৯০ হাজার টাকা নেন বলেও স্বীকার করেন। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকাও ফেরত দেয়া হয়।
অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগকারি, দালাল এবং মো. ইমরান হোসাইন এর উপস্থিতিতে অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় দালাল রিদুয়ানকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে ।