‘সবার ঘরে বাবা আসে, আমার বাবা আসে না’

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিচার চেয়েছে দুই শিশু। মায়ের সঙ্গে আজ সোমবার সকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হয়ে দুই শিশু তাদের বাবা আবদুল জলিলের হত্যার বিচার দাবি করে।

আট বছরের শিশু আল মুবিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে এনটিভি অনলাইনকে বলে, ‘আমরা বাবা ডাকতে পারি না। সবার ঘরে বাবা আসে, আমার বাবা আসে না। আমরা বাবার খুনি ওসি প্রদীপের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’ এ সময় তার পাশে বসা ছোট ভাই ফরহাদও কাঁদছিল।

সন্তানদের সঙ্গে থাকা আবদুল জলিলের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম দাবি করেন, সাবেক ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানায় থাকাকালে তাঁর স্বামীকে মিথ্যা অজুহাতে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি স্বামীকে বাঁচাতে ভিটেবাড়ি বিক্রি করে চার লাখ টাকা দেন ওসি প্রদীপকে। কিন্তু, এর পরেও ওসি প্রদীপ তাঁর স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। সন্তানদের মতো তিনিও সিনহা হত্যা মামলায় আদালতের কাছে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেছেন।

ছেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের পরে ওসি প্রদীপ জেলে যাওয়ার আগপর্যন্ত মামলা করতে পারিনি। থানায় মামলাও নেয়নি।’

‘২০২০ সালের ২৭ আগস্ট আমি বাদী হয়ে কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছি’, যোগ করেন ছেনোয়ারা বেগম।

সেই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কক্সবাজার টেকনাফ থানার হ্নীলা ইউপির হোয়াইক্যংয়ের মহেশখালীয়া পাড়ার সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মৃত আবদুল জলিল। ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর আবদুল জলিলকে কক্সবাজার শহরের আদালতপাড়া থেকে আটক করে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া। পরে তাঁকে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই দারোগা মশিউর জলিলকে নিয়ে টেকনাফ থানায় রাখেন এবং তাঁকে পুলিশ ধরেনি বলে স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিকট নানা লুকোচরি করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, একপর্যায়ে জলিলের স্ত্রীকে জানানো হয়—তাঁকে (আবদুল জলিল) ইয়াবা ব্যবসার অপরাধে ক্রসফায়ার দেওয়া হবে। যদি স্বামীকে বাঁচাতে চান, তাহলে ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। মশিউরের কথামতো স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে জলিলের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম স্থানীয় দফাদারকে নিয়ে দারোগা মশিউরসহ টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি বর্তমান সিনহা হত্যা মামলার আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু, টাকা নিয়েও স্বামীকে ফেরত দেবে বলে কালক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে স্বামীর কথা বললে তাঁকে (ছেনোয়ারা বেগম) ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পরে মাসের পর মাস চলে গেলেও স্বামী জলিলকে ফিরিয়ে দেয়নি ওসি প্রদীপ ও মশিউর।

ছেনোয়ারা বেগম আরও জানান, দীর্ঘ আট মাস পর ২০২০ সালের ৭ জুলাই স্বামী আবদুল জলিলকে তাঁর নিজ বাড়ির পেছনে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করেন ওসি প্রদীপ।

Leave a Reply